মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :: কক্সবাজার জেলা কারাগারে ৪৭ মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নাগরিক কোয়ারিয়েন্টানে রয়েছে। তাদেরকে গত ১৫ মার্চ কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হলে তখন থেকে তাদের করিয়েন্টানে রাখা হয়। কক্সবাজার জেলা কারাগারের ডিভিশন ওয়ার্ডকে কোয়ারিয়েন্টন হিসাবে প্রস্তুত করে তাদেরকে সেখানে রাখা হয়েছে। তবে গত ৩ দিনের নিবিড় পর্যবেক্ষনে তাদের শরীরে কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু (COVID-19) ধরা পড়েনি। কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মোঃ মোকাম্মেল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ৪৭ জন মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে কাঠ বিক্রি করতে এসে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করে জেলা হাজতে পাঠায়।
জেল সুপার মোঃ মোকাম্মেল হোসেন কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরিত নতুন বন্দিদের কোয়ারেন্টেনে রাখার জন্য পৃথক একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান। বৃহস্পতিবার থেকে যেসব নতুন বন্দী কক্সবাজার কারাগারে আসবে তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে পর্যবেক্ষণে রাখার পর, কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হবে। জেল সুপার মোঃ মোকাম্মেল হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কারা ফটক দিয়ে প্রবেশের পর বন্দিদের হাত ধোয়া ও পরিষ্কারের জন্য পানি ও সাবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে কারাগারের অভ্যন্তরে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্দিদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, সেজন্য চিকিৎসক ও কারাকর্মীদের মাধ্যমে মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৪৮টি কারাগারে প্রায় ৯০ হাজার কারাবন্দি রয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে কারাবন্দিদের সুরক্ষার জন্য গত ১০ মার্চ কারা অধিদফতর থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কারাগারগুলো নির্দেশনা মানছে কিনা-তা তদারকি করার জন্য বিভাগীয় ডিআইজিদের সপ্তাহে অন্তত দুটি কারাগার পরিদর্শন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ মার্চ থেকে কারাগারগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে বন্দিদের রাখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সাধারণ বন্দিদের থেকে পৃথক ভবনে এই ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
জেল সুপার মোঃ মোকাম্মেল হোসেন আরো জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কারাগারের ভেতরে প্রতিটি ওয়ার্ডে হ্যান্ডওয়াশ ও সাবান ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের কারারক্ষী যারা আছেন, তাদের হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার ব্যবহার শুরু করেছি।
নতুন বন্দিদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা সম্পর্কে জেল সুপার মোঃ মোকাম্মেল হোসেন বলেন, নতুন যেসব বন্দি ভেতরে প্রবেশ করছে, তাদের কমপক্ষে ১৪ দিন ইনকিউবেশন পিরিয়ডে রাখা হচ্ছে। জীবাণু প্রবেশের পর থেকে লক্ষণ প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় ইনকিউবিশন পিরিয়ড। কোনও বন্দি যদি বাইরে থেকে জীবাণু নিয়ে আসে, তাহলে ওই জীবাণু থেকে রোগ ছড়ানোর সর্বোচ্চ সময়সীমা পর্যন্ত তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখি।
তিনি বলেন, সদর দপ্তর থেকে ইনফারেড থার্মোমিটার প্রেরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক আসামি আসার সঙ্গে সঙ্গে ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে চেক করা হবে। যাদের তাপমাত্রা বেশি হবে, তাদের কারা হাসপাতালে আলাদা করে রেখা হবে। যেসব রোগী জ্বর হাঁচি কাশি নিয়ে আসবে, তাদের আলাদাভাবে ১৪ দিন সেখানে রাখবো। তবে এখনো পর্যন্ত কারও মধ্যে করোনা ভাইরাস জীবাণু পাওয়া যায়নি।
কারাবন্দিদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে স্বজনদের সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেল সুপার মোঃ মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, বন্দিদের সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজন দেখা করতে পারবেন। জেল কোড অনুযায়ী সাক্ষাৎ যেন কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সাক্ষাৎকারের জন্য যারা আসবেন, তারা রুমে প্রবেশের আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ভেতরে প্রবেশ করবেন। এছাড়া মূল গেটে নির্দেশ দেওয়া আছে, দৃশ্যমানভাবে অসুস্থ কোনও সাক্ষাৎপ্রার্থী এলে তাদের ভেতরে আসতে না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত: